এবার ৮০ দশকের তুমুল জনপ্রিয় সিনেমা হল নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার হাসনাবাদ এলাকার ছন্দা সিনেমা হলটি অবশেষে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই সিনেমা হলের জায়গা বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। ইদরিসিয়া দারুল কোরআন মাদরাসা নামে একটি দ্বীনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সিনেমা হলটি কিনে নিয়েছেন। জানা গেছে, সিনেমা হলের জমিটি কিনার জন্য ২০ লাখ টাকা বায়নাও করা হয়েছে। বিক্রির প্রক্রিয়া শেষ বলে জানিয়েছেন মালিকপক্ষ ও মাদরাসার জিম্মাদার মাওলানা মোকাররম হোসেন।
এদিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিনেমা হলের সামনের রাস্তার পাশে প্রচারে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা নামে একটি ব্যানার সাঁটানো রয়েছে। ব্যানারে লেখা রয়েছে, ‘আলহামদুলিল্লাহ ছন্দা সিনেমা হলটি মাদরাসার জন্য বায়না করা হয়েছে। চুক্তিমূল্য ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা, বায়না মূল্য ২০ লাখ টাকা। সদকায়ে জারিয়ার এ মহৎ কাজে আপনাদের আন্তরিক দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করছি। মাদরাসার রসিদ ছাড়া কোনোপ্রকার লেনদেন করবেন না।’
ইদরিসিয়া দারুল কুরআন মাদরাসার মোহতামিম মাওলানা মো. মোকাররম হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, মালিক পক্ষ হলটি বিক্রি করে দেবে। স্থানীয়রা চিন্তা করে হলটি মাদরাসার জন্য ক্রয় করার পরিকল্পনা নেন। মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা দাম নির্ধারণ করা হয়। ২০ লাখ টাকা অগ্রিম দিয়ে বায়না দলিল করা হয়েছে। সবার সহযোগী নিয়ে মাদরাসাটির নামে ওই স্থাবর সম্পত্তি ৩৩ শতক জমি ওকফ দলিল করা হবে। আশা করি স্থানীয় ও বিত্তবান সকলের সহযোগিতায় দ্বীনি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে।
এদিকে নরসিংদীর প্রবীণ চলচ্চিত্র প্রয়োজক শামসুর রহমান পিন্টু সাংবাদিকদের বলেন, দেশের চলচ্চিত্র প্রদর্শন শিল্প ক্রান্তিকাল পার করছে। ক্রমশ নিভে যাচ্ছে দেশের হলগুলোর রুপালি পর্দার আলো। নরসিংদীতে গত দুই দশকে বন্ধ হয়ে গেছে ১৫টির বেশি প্রেক্ষাগৃহ। সর্বশেষ হাসনাবাদের ৯০ দশকের ছন্দা সিনেমা হল বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।
বর্তমানে ঢিমেতালে নরসিংদীতে টিকে আছে দু-একটি সিনেমা হল। তা ছাড়া বর্তমান ডিজিটাল যুগে সবার হাতে স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেট থাকায় এখন সিনেমা, নাটকসহ চিত্তবিনোদন হাতের মুঠোয়। তাই এখন আর সিনেমা হলে যেতে হয় না। মানুষ মোবাইল ফোন বা ল্যাপটপ-ডেক্সটপেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে সিনেমা, নাটক ইত্যাদি দেখে থাকে।
এদিকে ছন্দা সিনেমা হলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রুবেল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘদিন লোকসানে চলছিল হলটি। মাস শেষে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, বিদ্যুৎ বিল, জেনারেটরসহ নানা মেইনটেন্যান্স খরচ রয়েছে। লোকসানি এই প্রতিষ্ঠান আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। কয়েক বছর আগেও সপ্তাহে দু-একটি সিনেমা রিলিজ হত, এখন মাসেও একটি হয় না। নতুন সিনেমা মুক্তি পেলে তা দু-এক সপ্তাহের মধ্যেই ইন্টারনেটে বা অন্যান্য কোনো মাধ্যমে পাওয়া যায়। তাই হলে তেমন কেউ সিনেমা দেখতে আসে না। নিরুপায় হয়ে এ ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হচ্ছে।